এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চাঁদা না দেয়ায় সৈয়দ আলী আরিফ নামে নির্মাণাধীন একটি স্কুল ভবন নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপককে মারপিট করে আহত করার ঘটনা ঘটেছে।

বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নির্মাণ কাজ। রোববার বিকেলে উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের বালিয়াকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে পুলিশ রোববার রাতে মামলার এক নম্বর আসামি ছাত্রলীগ নেতা শরীফুল ইসলাম হাওলাদারকে (৩০) গ্রেপ্তার করে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত শরীফুল ইসলাম ওরফে শরীফ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সৈয়দ আলী আরিফ বাদী হয়ে রাতেই শরীফসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে থানায় একটি চাঁদাবাজী মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামি শরীফকে সোমবার দুপুরে রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদেরকেও গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।

রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিন শেখ গ্রেপ্তারকৃত শরিফুল ইসলাম হাওলদার রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বলে নিশ্চিত করেছেন।

শরীফুল ইসলাম হাওলাদার রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের মোতালেব হাওলাদার ওরফে মুতাই এর ছেলে।

সে পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। একইসাথে সে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী দল এনবিআরএম এর একজন সক্রিয় সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বালিয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ‘অমি ইন্টারন্যাশনাল’ নামক ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে।

আহত ব্যাবস্থাপক সৈয়দ আলি আরিফ বলেন, স্কুলের সীমানা জটিলতা নিরসন করে গত অক্টোবর থেকে তারা কাজ শুরু করেন। তখন থেকে কাজের সাইডে থাকা টেকনিক্যাল ম্যানেজার রবিউল ইসলামের কাছে বারবার শরীফ হাওলাদার চাঁদা দাবী করে। মাটি খননের পর ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সেন্ড পাইলের কাজ শেষ করে ১৫ দিনের বিরতি শেষে গত শনিবার (২১ জানুয়ারী) স্কুলে নির্মাণ সামগ্রী ফেলেন।

পরদিন রোববার (২২ জানুয়ারী) টেকনিক্যাল ম্যানেজার রবিউল ইসলাম স্কুলে গেলে শরীফসহ ৬ জন তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসে অস্ত্র (পিস্তল) ঠেকিয়ে তাদের কাছে এককালীন ৩ লক্ষ টাকা এবং দৈনিক ১ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবী করে।

এ সময় তারা টাকা না দিলে কাজ করতে দেবে না এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

তিনি বলেন, রোববার বিকেলে আমি স্থানীয় পেশকারের মোড়ে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় শরীফ আমাকে দেখে গালমন্দ শুরু করে। আমি পাশের একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে বসলে সেখানে শরীফ লোকজন নিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে কিল-ঘুষি ও লাত্থি মেরে আমাকে আহত করে। এ সময় সেখানে অনেক লোকজন জড়ো হলে হামলাকারীরা কৌশলে সেখান বের হয়ে যায়। এরপর আমি স্কুলের দিকে আসলে সেখানেও তারা আমাকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে জীবন রক্ষার্থে আমি পাশের এক বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই। এসময় সন্ত্রাসীরা কাজের সাইডের বিভিন্ন মালামাল তুলে ফেলে দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ভয়ে শ্রমিকেরাও কাজ বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে চলে যায়।

পুলিশকে খবর দেওয়া হলে সন্ধ্যার দিকে অভিযুক্ত শরীফ হাওলাদারকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমাকে (সৈয়দ আলী আরিফ) ওই বাড়ি থেকে এবং পথিমধ্যে আরেক বাড়িতে লুকিয়ে থাকা টেকনিক্যাল ম্যানেজার রবিউলকে উদ্ধার করেন।

গোয়ালন্দ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান খান বলেন, প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে ঢাকার মের্সাস অমি ইন্টারন্যাশনাল নামক প্রতিষ্ঠান স্কুলটির নির্মাণ কাজ করছে।

স্থানীয় নানাবিধ ঝামেলায় ওই কাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি কাজটি শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় উদ্ভুত ঘটনা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক।