আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) : ঢাক, ঢোল আর কাঁসার ঘন্টার শব্দে চারপাশ উৎসব মুখর পরিবেশ। বাদ্যের তালে নেচে নেচে লাঠি নিয়ে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করেন লাঠিয়ালরা। তারপরই চলে লাঠির আসল কসরত। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও তাকে আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা।
এসব দৃশ্য দেখে আগত দর্শকরাও করতালির মাধ্যমে উৎসাহ যোগায় খেলোয়াড়দের। হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে নিয়মিত এই ধরনের আয়োজন করার দাবিও করেন দর্শকরা।
বাংলার ঐতিহ্যের এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে মানিকগঞ্জের ঘিওরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের বড় কুষ্টিয়া গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ২ দিন ব্যাপী বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলার প্রথম দিনে (পহেলা বৈশাখ) অনুষ্ঠিত হয় সকল বয়সী মানুষের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রেিতাগীতা ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান। (শেষ দিন শুক্রবার) প্রদর্শন করা হয় বিলুপ্তপ্রায় এ লাঠি খেলার। লাঠি খেলায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চারটি দল অংশ নেয়। গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাটি দেখতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশুরা ভিড় জমান।
বড় কুষ্টিয়া গ্রামবাসীর উদ্যোগে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় লাঠি খেলা, শিশুদের দৌড়, পঞ্চাশোর্ধ মানব দৌড়, বয়স্ক নারীদের পাতিল ভাঙা, বৌ-শাশুড়িদের বালিশ খেলা, ঘোড় দৌড়, সাইকেল রেসসহ নানা ধরনের ক্রীড়া নৈপুণ্যের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মেলার মাঠ পরিণত হয় মানুষের মিলন মেলায়। মেলার হরেক রকম পসরা নিয়ে বসেন দোকানীরা।
খেলায় অংশ নেওয়া প্রবীণ লাঠিয়াল সর্দার আব্দুস সামাদ জানান, গ্রামীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বাপ-দাদার স্মৃতিস্বরুপ তারা এ খেলাটি খেলে থাকেন। তবে এই খেলার সঙ্গে জড়িতরা প্রায় সবাই গরিব। তারা দুঃখ-দৈন্যে জীবনযাপন করেন। তাদের জন্য সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই। তেমন কোনো ব্যবস্থা হলে নিয়মিত চর্চা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা এই খেলাকে আরও বড় পরিসরে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারতেন।
শুক্রবার বিকেলে বিভিন্ন ক্রীড়া ও শারিরীক কসরত ও গ্রামবাংলার লোকজ সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, পয়লা ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার হারুণ অর রশিদ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মন্ডল, সাধারন সম্পাদক সামিউল প্রধান, মেলা উদযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক মোঃ সোহাগ হোসেন বাবু, আল মামুন, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল মান্নান, নাঈম হোসেন প্রমুখ।
মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক মোঃ লিটন মন্ডল বলেন, ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া সব খেলা রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আশেপাশের কয়েক গ্রামের বৌঝি মেয়ে জামাইরা সবাই বছরের এই দিনটার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এমন প্রাণবন্ত আয়োজন আগামীতেও অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।