আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) : মানিকগঞ্জের ঘিওরে ভোজ্যতেল সয়াবিনের সংকট দেখা দিয়েছে। গত পনের দিন ধরে সয়াবিন তেল নিয়ে এই সংকট চলছে। সাপ্লাই ও সংকট পুঁজি করে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের দোকানে তেলের দাম একেক দোকানে একেক রকম।

দোকনিরা যে যেভাবে পারছে সেভাবে ইচ্ছেমতো ক্রেতাদের কাছে সয়াবিন তেল বিক্রি করছে। এক লিটার ও দুই লিটার বোতল থাকলেও ৫ লিটার বোতলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তবে খোলা তেলের পর্যাপ্ততা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। ভুক্তভোগী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করা হয়েছে।

অপরদিকে কোম্পানি থেকে তেল সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবী করেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। আবার বিক্রেতাদের অনেকে ক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনের বেশি তেল কেনার অভিযোগ করেছেন।

বাড়তি দামের ভোগান্তিতে পড়া ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পাঁচ লিটার বোতলের তেল নেই। এক ও দুই লিটার তেলের বোতলও কম পাওয়া যাচ্ছে। বোতলের গায়ে দেয়া ১৬৮ টাকা লেখার জায়গায় ১৮০ টাকা মূল্যে তেল বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দফায় দফায় সয়াবিনের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটি। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন বলে জানান ক্রেতা সাধারণ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই ডিলারদের কাছ থেকে তারা তেল পাচ্ছেন না। এ জন্য খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে এই ভোজ্যতেল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তরা এলাকার রাশেদা আক্তার নামের এক গৃহিণী বলেন, দিনের পর দিন তেলের দাম বাড়ছেই। তার ওপর বাজার থেকে সয়াবিন তেল গায়েব।

রাতারাতি এত তেল গেল কোথায়? উপজেলা সদর বাজার, ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট, উপজেলা মোড় বাজার, বানিয়াজুরী, জাবরা, তরা হাট, বালিয়াখোড়া, পয়লা, সিংজুরী, বড়টিয়া, নালী, বাঠইমুড়ি, কেল্লাই বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের অধিকাংশ দোকানেই নেই বড় আকৃতির বোতলজাত সয়াবিন তেলের বোতল। তবে খোলা তেল পাওয়া যাচ্ছে। দোকানগুলোয় ৫০০ মিলিলিটার, ১ ও ২ লিটারের কিছু বোতল চোখে পড়লেও ৩ ও ৫ লিটারের কোনো বোতলের দেখা মেলেনি।

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা পনের দিন আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম রাখা হচ্ছে ৮৩০ টাকা করে। গত সপ্তাহে একই ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৭৯০ টাকা দরে। খোলা বা লুজ পামঅয়েলের দাম রাখা হচ্ছে ১৫৫ টাকা লিটার।

বানিয়াজুরী বাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ীর দোকানে পাঁচ লিটার বোতলের তেল কিনতে আসেন শিক্ষক রুহুল আমিন। না পেয়ে তিনি এক লিটারের দুটি বোতল কিনে নিয়ে যান। বোতলের গায়ে দেয়া মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে কিনতে হচ্ছে তার।

একটি ভোজ্যতেল কোম্পানির ঘিওর উপজেলা ডিস্ট্রিবিউটর নিরঞ্জন বণিক বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা চাহিদার তুলনায় বেশি তেল নিয়েছেন। আবার ভোক্তারাও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি তেল কিনে রেখেছেন। এ জন্য বাজারে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলা সদর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া বলেন, খোলা তেল থাকলেও গত শুক্রবার থেকে বোতলজাত তেল দেওয়া হচ্ছে না। বর্তমানে খুচরা তেলেরও স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। ১ লিটারের বোতল পূর্বে ডিলারের কাছ থেকে কিনতেন ১৫৪ টাকায় আর বর্তমানে ১৬৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। বাজারে এ সংকটের বিষয়ে বানিয়িজুরী এলকার জনৈক পরিবেশক বলেন, প্রায় পনেরদিন ধরে কোম্পানি থেকে তেল কম দিচ্ছে।

চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই কম এবং মানুষজন চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে তেল কিনে নেয়ার ফলে এই পরিস্থিতি হয়েছে।

উপজেলা নিরাপদ খাদ্য পরির্দশক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে সয়াবিন তেলের বিক্রয় মূল্যে কারসাজি, অধিক মূল্যে তেল বিক্রয় করার অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান রুমেল বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাজার ও বাজারে অভিযান পরিচালিত হয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও কঠোর ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের কিছুটা সংকটের অভিযোগ রয়েছে। ডিলার, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা মিলে এ সংকট তৈরি করেছেন কি না, তা পর্যবেক্ষণে বাজার ও গুদামে অভিযান চালানো হবে। কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।