বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন

গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি : বিগত ২০১৯ ও ২০ সালে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

শনিবার বিশ্ব ইজতেমায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণকক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিটি মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মো. আসাদুর রহমান কিরণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা আশা করছি এ বছর ৫ কোটি টাকার মধ্যেই ইজতেমার দুই পর্বের আয়োজন সম্পন্ন হবে। অথচ বিগত ২০২০ সালে এর দ্বিগুণ খরচ দেখানো হয়েছিল। বিগত ২০১৯ সালে ইজতেমায় যারা কাজ করেছিলেন তারা আজও বিল পাননি। ওই বছর ইজতেমা অনুষ্ঠানের পর বেনামী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব বিল উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

প্রেসব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র জানান, ইজতেমায় জরুরী পরিচ্ছন্নতা সেবা প্রদানের জন্য সিটি করপোরেশনের সার্বক্ষনিক গার্বেজ ট্রাকসহ প্রায় ৬০০ পরিচ্ছন্নকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানের দক্ষিণ পাশে তুরাগ নদীর তীরে বর্জ্য ফেরার জন্য অস্থায়ীভাবে ডাম্পিং পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে। ইজমেতা ময়দানের ভেতর ও বাইরে মশক নিধনের জন্য ১০০টি স্প্রে মেশিন ও ৬০টি ফগার মেশিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইজতেমার ড্রেন, টয়লেট জীবানুমুক্ত করার জন্য ৭০০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার ক্রয় করা হয়েছে এবং চাহিদা মত ময়দানে সরবরাহ করা হচ্ছে। ময়দানের উত্তর পাশে কামারপাড়া রাস্তায় পাইপ ড্রেন পরিষ্কার করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। ইজতেমা শুরুর আগেই মুসল্লিদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ মাঠ পরিষ্কার করা হয়েছে। যা এখনো চলমান আছে এবং ২য় ধাপের ইজতেমার জন্য পুনরায় সম্পূর্ণ মাঠ পরিষ্কার করা হবে।

তিনি বলেন, ২য় ধাপ শেষে ময়দান চূড়ান্ত পরিষ্কার করা হবে। ইজতেমা ময়দানে ২৫ ওয়াটের ৪ হাজার, ১৮ ওয়াটের ৫ হাজার এলইডি বাতি ও ৫০ হাজার মিটার ১.৫ আরএম তার এবং ময়দান সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ৪০০টি এলইডি সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমা সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশে ২৬০টি এলইডি ফ্লাডলাইট স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ১১শ’ সড়ক বাতি মেরামত, পুনঃস্থাপনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে। ইজতেমায় মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের অস্থায়ী আবাসন ও সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার কনট্রোলরুম সমূহ ও বিভিন্ন সংস্থার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে বৈদ্যুতিক তার, বাতিমহ প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক মালামাল সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়েছে। অশ্লীল পোস্টার, ব্যানার অপসারণ, যানজট নিরসনে অবৈধ পার্কিং প্রতিরোধ ও বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

ভারপ্রাপ্ত মেয়র আরো জানান, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ইজতেমার মুরব্বীদের চাহিদা মোতাবেক পানির পাইপ সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় কাজ চলমান রয়েছে এবং ইজতেমায় মেহমানদের জন্য এক লাখ বোতল পানি সরবরাহ করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠে জিএমপি পুলিশের চাহিদা মোতাবেক সিসি টিভি স্থাপন করা হয়েছে। যাবতীয় ইকুইপমেন্ট সাপোর্টের জন্য বিভিন্ন যান ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণের জন্য ১০টি ড্রাম ট্রাক, ২টি পে-লোডার ও ২টি ব্যাকহো-লোডার ভাড়ায় নিয়োজিত করা হয়েছে। সার্বক্ষনিক পানি ফোটানোর জন্য ৩টি ওয়াটার ভাউজার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইজতেমার পাশে অবৈধ ব্যানার, ফ্যাস্টুন উচ্ছেদ এবং মুসল্লিদের বসার জন্য মাঠের উচু নিচু জায়গা রোলার দিয়ে রোলিং করে মাঠসহ নদীর তীর ও স্কুল মাঠ ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় সাড়ে ৩১ হাজার চট সরবরাহ করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মুরব্বীদের চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন স্থানে বালি ও মাটি ভরাট, আরসিসি স্লাব, এইচবিবি রাস্তা ও র‌্যাম্প এর কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় পুলিশের ব্যবহারের জন্য ৩০০ অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ ও প্রদর্শনীর জন্য সচেতনতামূলক শ্লোগান সম্বলিত অস্থায়ী ডিজিটাল ব্যানার স্থাপন এবং দেওয়াল পরিষ্কার ও রং করণ করা হয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাবের ব্যবহারের জন্য ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৩০টি অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, র‌্যাব, পুলিশ, সিভিল সার্জন, আনসার ভিডিপি ও ফায়ার সার্ভিসের জন্য অস্থায়ী আলাদা কনট্রোলরুম, অস্থায়ী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, সাংবাদিকদের জন্য অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। ইজতেমার বিভিন্ন প্রবেশপথে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে অস্থায়ী তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ইজতেমা অনুষ্ঠানের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ইজতেমার প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভার অস্থায়ী প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছিল।