গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি : গাজীপুর মহানগরের সাইনবোর্ড এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করতো পরকীয়া প্রেমিক যুগল। বিয়ের জন্য চাপ দিলে অবশেষে প্রেমিকাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ ওয়্যারড্রবে ভরে রাস্তার পাশে ফেলে যায় প্রেমিক। পরে পুলিশ সেটি অজ্ঞাত লাশ হিসেবে উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

লাশ উদ্ধারের মাত্র ৪ দিনের মাথায় এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করলো গাজীপুর পিবিআই। এ হত্যাকান্ডে জড়িত প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমন (২৪) ও লাশ বহনে সহযোগিতাকারী ফারুক হোসেন (২৪) ও শাহরিয়ার আকন্দ (১৯)কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।

গত ১৪ অক্টোবর জয়দেবপুর থানাধীন বি কে বাড়ী এলাকায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একটি ওয়্যারড্রব থেকে অজ্ঞাত যুবতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে স্বজনরা লাশ সনাক্ত করেন।

পিবিআই পুলিশ জানায়, প্রায় দুই বছর আগে এক সন্তানের জননী ভিকটিম ছামিনা খাতুন ওরফে সাবিনার (৩২) সংসার ভাঙ্গে। পরে তিনি পরকীয়া প্রেমিক গ্রেফতারকৃত আসামী রাকিবুল হাসান সুমনের সাথে গাজীপুর মহানগরের সাইনবোর্ড এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে কিছু দিন না যেতেই প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমন প্রেমিকা সাবিনাকে ছেড়ে তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে চলে যান।

এর পর থেকে প্রেমিকা সাবিনা প্রায় সময় প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমনকে ফোনে বিরক্ত করত এবং বিয়ের জন্য চাপ দিত। এমনকি বিয়েতে রাজী না হওয়ায় সাবিনা এরই মধ্যে গাজীপুরের নাওজোড় এলাকার স্থানীয় লোকজন দিয়ে প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমনকে মারধর করে।

এ ঘটনার জেরে প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাবিনাকে বিয়ের আশ্বাসে গত ১৩ অক্টোবর বন্ধু নাঈমের গাজীপুর মহানগরের বাসন সড়কস্থ ভাড়া বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে নানা ছলনায় বিয়ের আগেই তারা বাসর করেন। পরে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় রাকিবুল হাসান সুমন ও নাঈমকে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন সাবিনা। এতে পরবর্তীতে ঝামেলা হতে পারে ভেবে নাঈম সাবিনার হাত চেপে ধরে ও রাকিবুল হাসান সুমন গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে সাবিনাকে হত্যা করে।

পরে লাশ গুম করার জন্য রাকিবুল হাসান সুমন ও নাঈম বাসন সড়কের একটি ফার্ণিচারের দোকান থেকে ১২ হাজার টাকায় কিস্তিতে একটি ওয়্যারড্রব কিনে বাসায় নিয়ে যান এবং এর ভেতরে সাবিনার লাশ রেখে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে নাঈমের ভায়রা ভাই ফারুক হোসেনের পিকআপে লাশভর্তি ওয়্যারড্রব উঠিয়ে জয়দেবপুর থানাধীন বি কে বাড়ী এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে তারা চলে আসেন। সুমন ও নাঈমকে এ লাশ বহনে ফারুক হোসেন ও শাহরিয়ার সহযোগিতা করেন।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটি তদন্ত করেন গাজীপুর পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক এ কে এম রেজাউল করিম।

নিহত সাবিনা কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার দাড়ারপাড় গ্রামের আয়নাল হকের মেয়ে। প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমন শেরপুর জেলার নকলা থানার মাওড়া গ্রামের মর্তুজ আলীর ছেলে। তারা উভয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। গ্রেফতারকৃত ফারুক হোসেন টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার নবব গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে এবং শাহরিয়ার আকন্দ সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ থানার চৌবাড়ী গ্রামের শাহ আলম আকন্দের ছেলে।