(১) মিরসরাইয়ের মহামায়া সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে চাষ করা আমন ধান। (২) মিরসরাইয়ের মহামায়া প্রকল্প। ছবি: সংগৃহিত
এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত দেশের ২য় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহাময়া প্রকল্প এখানকার কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। এক সময় মহামায়া ছরা ছিল এলাকার মানুষের গলার কাঁটা। এই খালের ছরার পানিতে তলিয়ে যেত ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। তাই এ ছরাকে ‘অভিশপ্ত’ মনে করতেন এলাকার মানুষ। কিন্তু সেই মহামায়া এখন আর অভিশাপ নয়, বড় রকমের আশীর্বাদ। মহামায়া ছরার উৎসমুখে তৈরি করা বাঁধেই বদলে দিয়েছে সব কিছু। মহামায়া প্রজেক্টে ধারণ করা পানি এখন হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্যলক্ষী। এ উপজেলার তিন ইউনিয়নের ১৮ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমিতে চাষ হয় এই পানি দিয়ে।
মহামায়া সেচ প্রকল্পের উপকারভোগী দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঘড়িয়াইশ গ্রামের কৃষক মোঃ শামসুদ্দিন বলেন, মহামায়া সেচ প্রকল্পের ফলে বর্তমানে আমরা পাহাড়ি ঢলের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আমাদের এলাকার কৃষকরা প্রতিবছর সময়মতো প্রকল্পের পানি দিয়ে বোরো, আমন চাষ করছে।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক সাহাব উদ্দিন, আবুল কাশেম বলেন, মহামায়া প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে আমাদের এলাকায় শত শত ঘরবাড়ি বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকত। তখন এলাকার জনসাধারণ এ খালকে অভিশাপ মনে করত। কিন্তু এখন এ লেক এলাকার অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।
জানা গেছে, এলাকার কৃষি উন্নয়ন ও জলবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেন মহামায়া সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তিতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় না থাকায় প্রকল্পের কাজ থেমে ছিলো। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ফের এ প্রকল্প পূর্ণাঙ্গতা পায়। ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হয় মহামায়া সেচ প্রকল্প। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে এলাকার কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছে এ প্রকল্পটি। ১১ বর্গ কিলোমিটার লেকটি গত ৯বছর ধরে কৃষিকাজের চাহিদা জন্য পানির চাহিদা পূরণ করে আসছে। এ লেকের পানি দিয়ে কৃষিকাজ হচ্ছে ১৮ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমিতে। ফলে লেকের কল্যাণে এখন উপজেলার তিন ইউনিয়ন মিরসরাই সদর, দূর্গাপুর এবং খৈয়াছড়া এলাকার কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে।
মিরসরাই উপজেলা সহকারী কৃষ কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন, ‘মহামায়া সেচ প্রকল্পের কারণে ১৮ হাজার অনাবাদি জমিতে এখন চাষাবাদ হচ্ছে। প্রতি বছর আমরা লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাচ্ছি। উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও খুশি।’
মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জসীম উদ্দিন বলেন, মহামায়া আমাদের প্রিয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের স্বপ্ন ছিল। তিনি প্রথমে ১৯৭২ সালে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানকে অবহিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রদক্ষেপও গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর এবং দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তা আবার ভেস্তে যায়। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেন।
তিনি আরো জানান, এক সময় এই মহামায়া খাল এলাকার মানুষের জন্য অভিশাপ ছিল, এখন প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এই খাল আশির্বাদ হয়েছে। এছাড়া মহামায়া দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। সরকার ইজারা দিয়ে এখান থেকে প্রতি বছর কয়েকটি কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে।