কুলাউড়ার ভাটেরা হিল ফরেষ্টে সামাজিক বনায়নে চারা রোপন শেষ করে টাঙ্গানো হয়েছে সাইনবোর্ড
ময়নুল হক পবন, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) : সদ্য সমাপ্ত হওয়া কুলাউড়ার ভাটেরা হিল ফরেস্টে ১০ হেক্টর বনভূূমিতে ২৫ হাজার রোপন শেষ করতে না করতেই খাসিয়ারা নানা অপতৎপরতা শুরু করেছে। সামাজিক বনায়নের অবস্থান থেকে ৩ কি:মি: দূরের খাসিয়ারা বিগত ২ মাস পূর্বে একবার চারা রোপনে বাধা দিয়ে কোর্টে গিয়ে স্বত্ব মামলা দায়ের করে। কিন্তু আদালত তাদের রিট মামলা খারিজ করে দেওয়ার পরে উপকারভোগী ও বনবিভাগ কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ২৫ হাজার বিভিন্ন প্রজাতীর গাছের চারা রোপন করে। কিন্তু খাসিয়ারা বনায়ন বিনষ্টের বিভিন্ন পায়তারা চালাচ্ছে বলে বন বিভাগ অভিযোগ করেছে। এদিকে খাসিয়াদের হিংস্র থাবায় ধবংস হচ্ছে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য; ধবংস হচ্ছে পাহাড়ের সৌন্দর্য।
জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বন বিভাগে পূন:বনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে কুলাউড়ার ভাটেরা হিল রিজার্ভ ফরেষ্ট-বøক-২ এর আওতাধীন কালিয়ারআগা নামক স্থানে পতিত ১০ হেক্টর বনভূমিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে বনায়নের উদ্দেশ্যে পলিব্যাগে ২৫ হাজার চারা উত্তোলন করে বরমচাল বিট অফিস। এবং যথারীতি চারা রোপন শুরুও করে। কিন্তু খাসিয়ারা বাধা দিলে কাজ বন্ধ থাকায় বনবিভাগের ১২/১৩ হাজার চারা নষ্ট হয় রোধে জ্বলে। এমনকি খাসিয়ারা সম্পূর্ন মিথ্যে অজুহাতে বনায়নের জায়গাটি তাদের মালিকানাধীন দাবী করে। এবং মৌলভীবাজার আদালতে স্বত্ব মামলা দায়ের করলে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। পরবর্তীতে বনবিভাগ মামলার জবাব ও আপত্তি দাখিল করে। আদালত ১০ আগষ্ট উভয়পক্ষের শুনানী গ্রহন করে খাসিয়াদের মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত।
আদালতে খাসিয়াদের মামলা খারিজ হওয়ার পর বনবিভাগ ও উপকারভোগীরা ১০ হেক্টর জায়গায় আকাশমনি, করই, জাম, বহেড়া, আমলকি, চিকরাশি, পিত্তরাজ ও আগর প্রজাতীর ২৫ হাজার চারা রোপন করে পাহারা ও রক্ষনাবেক্ষন কার্যক্রম গ্রহন করে।
কিন্তু খাসিয়াদের স্বত্ব মামলাটি নামঞ্জুর করে আদালত রায় প্রদান করায় এর বিরুদ্ধে আলফাছ খাসিয়া পুনরায় বিবিধ আপিল দায়ের করেছে বলে জানা গেছে।
বনায়নের উপকারভোগীরা জানান,কালিয়ারআগা নামক পাহাড়ী বনাঞ্চলে কখনও কোন খাসিয়ার অস্থিত্ব ছিলনা। তাছাড়া বনবিভাগের জায়গায় বনায়ন করতে বাধা দিয়ে খাসিয়ারা কার স্বার্থ রক্ষা করতে চাচ্ছে। সরকার যেখানে বনভূমি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন সেখানে খাসিয়ারা শত শত একর বনভূূমি জবর দখল করে পান চাষ করে নিজেরদেরকে রিষ্ট পুষ্ট করতে চাচ্ছেন। উপকারভোগীরা বলেন, বরমচাল,ভাটেরা কিংবা কুলাউড়ার পাহাড়ী এলাকায় খাসিয়াদের এক হাত জায়গাও তাদের বৈধ মালিকানাধীন নেই । খাসিয়ারা বনবিভাগের জায়গা জোরপূর্বক জবর দখল করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। একেক খাসিয়া ৫শ থেকে হাজার একর পর্যন্ত বনভূমি জবর দখল করে পান চাষ করে আলিশান জীবন যাপন করছে।
বনবিভাগ জানায়, কুলাউড়ার পাহাড় ছিল সবুজ বনে আচ্ছাদিত। ছিল কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয়কারী বাঁশ মহাল। সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতীর লক্ষ লক্ষ গাছের ভান্ডারে বনভূমি ছিল ভরপুর। কিন্তু কোটি কোটি বাঁশ ও গাছ কেটে সাবাড় করে গহীন অরণ্যে প্রথমে বসতি স্থাপন করে খাসিয়ারা প্রতিষ্টা করে পানের ঝুম। ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে খাসিয়ারা তাদের আত্মীয়-স্বজন এনে দখল বাড়াতে বাড়াতে কুলাউড়ার ১৩ হাজার একর বনভূমির মধ্যে ৮ হাজার একর বনভূমি জবর দখল পানের ঝুম প্রতিষ্টা করে লক্ষ লক্ষ টাকার পান বিক্রি করে আলিশান জীবন যাপন করে আসছে।
বনবিভাগের বর্তমানে যে সমস্থ জায়গা খালি আছে সেগুলিতে সামাজিক বনায়নের উদ্যোগ নিলেই খাসিয়াদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগে বলেছেন। খাসিয়ারা শুধু বনের জায়গা জবরদখল করে পানের ঝুম ও আলিশান বাড়ীঘর নির্মান করেছে তাই নয়,তারা পাহাড়ের বন্যপ্রাণী নিধন ও জীববৈচিত্র ধবংস করে ফেলেছে।
বন বিশেষজ্ঞরা জানান,এককালে কুলাউড়ার পাহাড় বণ্যপ্রানীর ছিল বিখ্যাত। ছিল বাঘ, হরিণ, বণ্যমোরগ, বণ্য হাতি, বিভিন্ন প্রজাতীর সাপ, লজ্জাবতীসহ বিভিন্ন প্রজাতীর বানর, বনবিড়াল, ময়না, টিয়া, মাছ রাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রজাতীর পাখি, বিভিন্ন প্রজাতীর ব্যাঙ্গ, পাহাড়ী কচ্ছপ, রাম কাছিমসহ বিভিন্ন প্রজাতীর কাছিম, ময়ুর, বিভিন্ন প্রজাতীর শকুন, মুখ পোড়া, টুপিপড়া ও চশমাপরা হনুমান, বিভিন্ন প্রজাতীর কাড়বিড়ালী, বাদুড়, বনরুই, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল, বনবিড়াল, বড়বাঘদাশ, খাটাশ, গন্ধগোকুল, বিভিন্ন প্রজাতীর শিয়াল, ভোঁদর, ভাল্লুক,ব ন ছাগল, তক্ষক ও বিভিন্ন প্রজাতীর কীটপতঙ্গ প্রভৃতি।
কিন্তু খাসিয়ারা তীর ধনুক,বন্দুক,ইয়ারগান দিয়ে প্রতিনিয়ত শিকার করে বণ্যপ্রানী খেয়ে ফেলার দরুন পাহাড়ের জীববৈচিত্র এখন ধবংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছেছে। খাসিয়া দিনে পানের ঝুমে পান চাষ ও বিক্রি করে আর রাতের আধারে শিকার করে বণ্যপ্রানী। সম্প্রতি গাজিপুরের এক খাসিয়া বিশাল আকৃতির একটি হরিণ শিকার করে মাংস বিক্রি করে বলে জানা যায়। এভাবে খাসিয়াদের হিংস থাবায় ধবংস হচ্ছে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র;ধবংস হচ্ছে পাহাড়ের সৌন্দর্য।
অথচ সরকার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষন ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ নামে একটি শক্ত আইন প্রনয়ন করেছেন বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র রক্ষায়। বন্যপ্রাণী শিকারীদের অর্থদন্ড ও জেলের বিধান রাখা হয়েছে এ আইনে। সচেতন মহল মনে করেন খাসিয়া পুঞ্জিতে সরকার নজরদারী শুরু করলে খাসিয়া কর্তৃক বন্যপ্রাণী শিকারের বাস্তব চিত্র সহজেই ধরা পড়বে।
এ ব্যাপারে বরমচাল বিট কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, খাসিয়ারা যতটুকুু জায়গায় বসবাস কিংবা পান চাষ করছে সব জায়গাই বনবিভাগের। বিভিন্ন কৌশলে তারা বনবিভাগের জায়গা তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে অবৈধভাবে। এরপরেও তারা ক্লান্ত হয়নি ভাটেরা হিল ফরেষ্টের কালিয়ারআগার এই ১০ হেক্টর বনায়নের উপরও তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে।
কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন জানান,আইনগতভাবে খাসিয়ারা হেরে গিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তিনি বলেন, ভাটেরা হিল ফরেষ্টের সামাজিক বনায়ন রক্ষায় যা যা করনীয় বনবিভাগ সবই করবে। সাজানো বাগান কাউকে বিনষ্ট করার সুযোগ দেওয়া হবে না।