কিলিয়ান এমবাপ্পে ও লিওনেল মেসি। একজনের সামনে সুযোগ মাত্র ২৩ বছর বয়সে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের। আরেকজনের সামনে এক অপ্রাপ্তি পূরণের সুযোগ।          

খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের পর্দা নামবে আজ। লুইসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় শুরু হবে সেই ম্যাচ। এক মাস ধরে যে ম্যাচের অপেক্ষায় ছিলেন বিশ্বব্যাপী ফুটবল সমর্থকরা- ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল।

আজ রাতে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ও এমবাপ্পের ফ্রান্স মুখোমুখি হবে কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে।

একজনের সামনে পরপর দুবার বিশ্বকাপ জিতে অমর হওয়ার সুযোগ। আরেকজনের সামনে ফুটবলে একমাত্র অপ্রাপ্তি দূর করার হয়তো এটাই শেষ সুযোগ।

লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পে একই ক্লাবে খেলেন, ফ্রান্সের প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে। এই কথা অন্তত আজ রাতের জন্য দুইজনই ভুলে যেতে চাইবেন।

লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পে, আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের দুই সুপারস্টারই একবার করে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন, একজন পরাজিত হয়েছেন, আরেকজনের হাতে উঠেছে শিরোপা।

আজ দুই দলেই অনেক তারকা ফুটবলার আছেন, যারা ক্লাব পর্যায়েও নাম করা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে আসছে দুজনের নাম, লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পে।

আট বছর আগে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং পত্রপত্রিকার পাতায় খুব দেখা গিয়েছিল।

লিওনেল মেসি বিশ্বকাপের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, না পাওয়া বিশ্বকাপ। সেই না পাওয়ার গল্প এবারে শেষ করতে চাইবেন তিনি। সাথে বিশ্বের কোটি কোটি আর্জেন্টিনা ভক্তকূল যারা টেলিভিশনের সামনে, বড় স্ক্রিনের সামনে কিংবা নিতান্ত মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকবেন।

এই অপেক্ষা আজকের না, আট বছরেরও না, এই অপেক্ষা ৩৬ বছরের। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই লিখেছিলেন, ‘মেসির হাতে উঠতে না পারাটা বিশ্বকাপেরই ব্যর্থতা’।

এবারও অনেকে লিখেছেন, ‘মেসি বিশ্বকাপ না জিতলে বিশ্বকাপ নিজেই অপূর্ণ থেকে যাবে’। মেসি ব্যালন ডি অর জিতেছেন সাতবার। ক্লাব ফুটবলের এমন কোনও পুরস্কার বা শিরোপা নেই যেটা মেসি জেতেননি।

মেসির ফুটবল ক্যারিয়ারে অপ্রাপ্তি এই একটাই, ফিফা বিশ্বকাপ। যেটা না জিতলে তিনি ‘সর্বকালের সেরা’র যে মুকুট পরে থাকার কথা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। তার দেশেইতো একজন ম্যারাডোনা ছিলেন, বলা হয়ে থাকে তিনি ১৯৮৬ সালে ছিলেন দলের একমাত্র তারকা। আর্জেন্টিনার সমর্থকরা, শিরোপার কমে সন্তুষ্ট হবেন না, মেসিও না।

লিওনেল মেসির সব আছে শুধু বিশ্বকাপ বাদে। প্রতিপক্ষের বড় তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের ক্যারিয়ার মাত্র আধা যুগ হবে। তার নামের পাশে একটা বিশ্বকাপ আছে, যিনি সেই বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারদের একজন ছিলেন। ছত্রিশ বছর বয়স্ক মেসির বিশ্বকাপ জেতার এটাই হয়তো শেষ সুযোগ।

এদিকে, কিলিয়ান এমবাপ্পে কেন এতো আলোচিত তা অন্য কোনও দল জানুক আর নাই জানুক আর্জেন্টিনা জানে। আরও সুনির্দিষ্টভাবে জানেন লিওনেল মেসি। যিনি গত চার বছরে জাতীয় দল ও ক্লাব পর্যায়ে এমবাপ্পের দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হেরেছেন। এমবাপ্পে সেসব ম্যাচে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। এমবাপ্পের সামনে এখন সুযোগ মাত্র ২৩ বছর বয়সে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের।

মেসির মতো তারকাখ্যাতি বা সমর্থন এই বিশ্বকাপে না পেলেও এমবাপ্পে খেলছেন মেসির মতোই। গোল করছেন, গোল করাচ্ছেন, মেসির চেয়ে একটি অ্যাসিস্ট কম তার শুধু।

দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে ইতোমধ্যে এমবাপে ৯ গোল করে ফেলেছেন। মেসি পাঁচ বিশ্বকাপে করেছেন ১১টি গোল।

বিশ্বকাপ ফাইনালের ঠিক দুইদিন পরেই এমবাপের জন্মদিন। জন্মদিন উদযাপন কেমন হতে যাচ্ছে সেটা ঠিক হয়ে যাবে আজ রাতেই।

একই দেশ পরপর দুবার বিশ্বকাপ জিতেছে, তাও প্রায় ষাট বছর আগের কথা। ছয় দশক পর আবার পরপর দুবার বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ এসেছে কোন একটি দলের কাছে। আর সেটা হলে আগের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক এমবাপ্পে এবারও নায়ক থাকবেন, আর সেটা থাকে ফুটবলের ইতিহাসে অমর করে দেবে নিঃসন্দেহে।