মোঃ সাইফুল ইসলাম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) : ইতিহাস একটি জাতির জীবনের ধারাবাহিক চলচ্চিত্র এবং তার সভ্যতার স্মারক। ‘মৌন অতীতকে সে মানুষের কাছে ব্যক্ত করে নির্মোহ-নিরপেক্ষতায়। ইতিহাসের এমনি এক সাক্ষী কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে জালালপুর নীলকুঠি।এটি সংরক্ষণ করলে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে নীল চাষের ইতিহাস।
‘নীলচাষ’ শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কোনো ইংরেজ সাহেবের হাতে চাবুক, অসহায় কৃষকের চোখে জল, আহাজারি ও ক্ষুধার হিংস্র থাবা। কলঙ্কিত আগ্রাসন ও সামাজিক সংগ্রামের চিহ্ন হয়ে আছে নীলচাষের ইতিহাস। তেমনি এখনও জালালপুর ইউনিয়নে সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীলকুঠি। তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নীল ব্যবসায়ীদের দুর্দান্ত প্রতাপে দিশেহারা ছিল নীল চাষীরা।
নির্যাতিত নীল চাষিদের দুর্বার আন্দোলনের মুখে বাংলার বুক থেকে নীল চাষ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও নীল করদের অত্যাচার নির্যাতন ও শোষনের স্মৃতি নিয়ে কালের স্বাক্ষী হয়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে জালালপুর নীলকুঠি। কালের বিবর্তনে অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হতে চলেছে নীলকুঠি। দামি মার্বেল পাথর আর গুপ্তধনের আশায় ভেঙে ফেলা হয়েছে মুল ভবনসহ সব কিছু।
সে সময় এক বিঘা জমিতে নীল তৈরী হতো ২-৩ সের। সেই নীল বিক্রি হতো ১৩-১৪ টাকায়। কিন্তুু নিল চাষীরা উৎপাদন খরচ হিসাবে পেত মাত্র ৩ টাকা। এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে খুন করে লাশ গুম করা হতো। এমনকি চাষীদেরকে দাঁড় করিয়ে মাথার উপরে মাটিতে নীলের বীজ বপন করে অনাহারে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। ঐ বীজ থেকে চারা না গজানো পর্যন্ত তাদের ছেড়ে দেয়া হতো না।
দর্শনার্থী আসাদুল্লাহ জানান, তারা বই পুস্তকে নীল চাষ সম্পর্কে পড়েছেন। পড়েছেন নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনী। আর দেখতে পারছে দু’শ বছর আগে ইংরেজদের নির্মিত নীলকুঠি যা কালের স্বাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।কটিয়াদী সরকারি কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা জানায়, ইতিহাস বই পড়ে কিছুটা ধারনা হয়েছিল। পরিবারের সাথে নীলকুঠিতে এসেছি। জরাজীর্ণ অবস্থায় নীলকুঠি দাঁড়িয়ে আছে,তার বাস্তবতা আমাদের মত নতুন প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
কটিয়াদী সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আশরাফুজ্জামান মুকুল বলেন,অনেক কিছুই কালের পরিবর্তনে বিলুপ্তির মুখে। এক সময়কার বাস্তবতা এখনকার ইতিহাস। নীলকরদের করুণ ইতিহাস মনে করলে শরীর শিহরিত হয়ে উঠে। নির্যাতনের স্মৃতি চিহ্ন জালালপুর নীলকুঠিকে নতুন প্রজন্মের কাছে ধরে রাখতে সংস্কার ও সংরক্ষণ প্রয়োজন।
কটিয়াদী উপজেলা প্রশাসন জানান, ইতোমধ্যেই নীলকুঠিটি সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মরা ইংরেজ শাসনামলের বিষয়ে জানতে পারে ও নীলকরদের অত্যাচার সম্পর্কে অবহিত হতে পারে।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, আমার নির্বাচনী এলকার একমাত্র ইতিহাস যুক্ত স্থান জালালপুর নীলকুঠি বাড়িকে নতুন প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে সরকারি ভাবে সংস্কার ও সংরক্ষনের সরকারের কাছে সর্বাত্মক দাবী জানাবো। বাংলার মানুষ নীলকরদের কাছে যে ভাবে নির্যাতিত হয়েছিল তাদের সেই মাথা উচু করে দাঁড়ানোর ইতিহাসকে ধরে রাখার জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমি করবো।