বগুড়া অফিস : দেশের সর্ববৃহত পৌরসভা, বগুড়া পৌরসভার উন্নয়নে সরকারী বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় যৎসামান্য। তাই পৌরসভা গঠনের ১৫ বছরেও পৌরএলাকার বিরাট জনগোষ্ঠি পৌরসুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত। তবে নিজ্স্ব তহবিলে পৌরসেবা দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বর্তমান পৌর পরিষদ। তাই পৌরবাসীর মন্তব্য, রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে বগুড়া পৌরসভার উন্নয়ন ।

তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে ১৮৭৬ সালে গঠিত ১৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বগুড়া পৌরসভাকে প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত করে গেজেট প্রকাশ করে। বিএনপি সরকারের উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তিতে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা। কিন্তু সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা না হওয়ায় বগুড়া পৌরসভা আর সিটি কর্পোরেশন হয়নি। তবে গত ১২ বছরে রংপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজিপুর সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া ফরিদপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু এখনও পৌরসভাই রয়ে গেছে বগুড়া। অথচ সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতকরণে যেসব যোগ্যতা দরকার তার সবই রয়েছে বগুড়ার। শুধু মাত্র রাজনীতির মারপ্যাচে পড়ে বগুড়া সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে নাগরিক সমাজের অভিমত।

বগুড়া পৌরসভার বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ এবং ভোটার ৩ লক্ষ। কিন্তু গ্রাম থেকে শহরে উন্নীত বিশাল জনগোষ্ঠি আজও পৌর সেবা পাচ্ছেন না । এরই মধ্যে কেটে গেছে ১৫টি বছর। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ অভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রায় ৫২ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে তখনকার ১৪টি ওয়ার্ডের আনাচে-কানাচে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্টসহ সব ধরনের উন্নয়ন কাজ করা হয়। তখন থেকে টানা তিন মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম মাহবুবর রহমান। তাঁর সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতার কারণে নিজস্ব তহবিলের দ্বারা সরকারের বিশেষ কোন বরাদ্দ ছাড়াই ছোটখাটো উন্নয়ন কাজ চলছে। তবে সরকারের বিশেষ বরাদ্দ ছাড়া সম্প্রসারিত এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন আদৌ সম্ভব নয়। ফলে আজও সম্প্রসারিত এলাকা ১২ নং ওয়ার্ড থেকে ২১ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত ৯টি ওয়ার্ডের মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। সেখানে রাস্তা, ড্রেন, সড়কবাতি তেমন কিছুই নেই। আবার অনেক রাস্তা আজও কাঁচা রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ইটের সলিং দেয়া হলেও তাতে কষ্টের শেষ নেই।

বগুড়া পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মেয়াদে বগুড়া পৌরসভার নিজস্ব তহবিলে প্রায় ১৪ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এ সব কাজের মধ্যে রয়েছে, রাস্তা নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ, বক্সকাল ভার্ট, সিসি রোড, গাইড ওয়াল, ড্রেন ইত্যাদি । এ ছাড়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গত বছর এক কোটি টাকা এবং চলতি বছর ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ মিলেছে। ৫ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হবে। এ ছাড়া সরকার উন্নয়ন সহায়তা বাবদ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) আওতায় গত বছর ৮৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সূত্র আরো জানায়, গত ১৫ বছরে সরকার উন্নয়ন সহায়তা বরাদ্দ বাবদ ৫ কোটি টাকা এবং প্রকল্প বাবদ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

প্রয়োজনের তুলনায় সরকারী সামান্য বরাদ্দ নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে হিমশিম খেতে হয়। তাই পাহাড় সমান সমস্যা থাকলেও বিশেষ বরাদ্দ না মেলায় কাংখিত উন্নয়ন নেই।

এ ব্যাপারে বগুড়া পৌর সভার তিন মেয়াদের মেয়র অ্যাডভোকেট এ কে এম মাহবুবর রহমান বলেন, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে পৌরসভায় উন্নয়ন সহায়তা দেয়া দরকার। কারন বগুড়া পৌরসভা প্রথম শ্রেনীর হিসেবে অন্যান্যদের মতোই বরাদ্দ পায়। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় পৌরসভা এটা। এখানকার জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা নতুন কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনের চেয়েও বেশী। তারা সিটি কর্পোরেশন হিসেবে বছরে শত শত কোটি টাকা বাজেটে আলাদা বরাদ্দ পায়। ফলে বিরাট জনগোষ্ঠির এ পৌরসভায় নিজস্ব তহবিল থেকে বড় কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন কখনও সম্ভব না । তাই এখানকার সম্প্রসারিত এলাকাসহ সকল এলাকার উন্নয়ন করতে হলে বিশেষ প্রকল্প গ্রহন করে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে নতুন ৯টি ওয়ার্ডের জনগনকে গত ১৫ বছরেও পৌর সভার কাংখিত উন্নয়ন প্রদান সম্ভব হয়নি।