# মিরসরাইয়ে গ্রীণব্লক ফ্যাক্টরীর উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশী
# এখানে তৈরি হলো ও পেভিং কংক্রিট ব্লক নদী-সাগর পথে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়
# ছোট উদ্যোক্তারা এ ধরণের ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে সফল হবেন

এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গ্যাসমিন লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি কোম্পানি গ্রীণ ব্লক নামের দুইটি কারখানায় নির্মাণ করেছে। এখানে তারা তৈরি করছে হলো ও পেভিং কংক্রিট বøক। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে উৎপাদনে যাওয়া এ ব্লক কারখানা বাণিজ্যিকভাবে এখন পুরোদমে সফলতার মুখ দেখছে। জার্মান প্রযুক্তিতে তৈরি এ কারখানায় সম্পূর্ণ সয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বানানো হয় ২০ রকমের ব্লক।

উদ্যেক্তারা জানিয়েছেন, উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নে স্থাপিত গ্যাসমিন লিমিটেড এর গ্রীণ ব্লক ফ্যাক্টরীর এ দুটি কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার ব্লক উৎপাদিত হয়। তবে এর চাহিদা আরো বেশি। দিন যত যাচ্ছে এটির চাহিদা তত বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজ ছাড়াও শহরে-গ্রামে বাড়ি তৈরির কাজেও দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শুধুমাত্র কংক্রিট হলো ব্লক এ ভ্যাট রিবেইট সুবিধা প্রদান করছে সরকার। হলো ব্লকের পাশাপাশি অন্যান্য ব্লকেও ভ্যাট এবং ট্যাক্স রিবেইট, ট্যাক্স হলিডে, ক্যাশ ইনসেনটিভ সুবিধা প্রদান করলে এ খাতে বিনিয়োগ কারীরা আরও উৎসাহিত হবেন।

এদিকে এ খাতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের সবিধা রয়েছ জানিয়ে গ্রীণ ব্লক ফ্যাক্টরীর কর্মকর্তারা বলছেন, ব্লক কারখানা তৈরিতে বিনিয়োগের মাত্রা খুবই কম। গ্যাসমিন লিমিটেড তাদের দুটি কারখানা তৈরিতে মোট বিনিয়োগ করেছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা। দেশের ছোট উদ্যোক্তারা এ ধরণের প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকির সম্ভাবনা যেমন কমবে, তেমনি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে শতভাগ। এছাড়া কংক্রিট ব্লক তৈরি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় এটি পরিবেশ রক্ষায়ও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

গ্যাসমিন লিমিটেড এর গ্রীণ বøক ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার মো. এনামুল হক জানান, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে তারা একটি কারখানায় ব্লক উৎপাদন শুরু করেন। এরপর চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের মিল থাকায় ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর অত্যাধুনিক জার্মান প্রযুক্তির আরেকটি কারখানা স্থাপন করে তাতেও উৎপাদন শুরু করে।

কোম্পানীটির উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের কারখানায় উৎপাদিত ব্লক পায়রা বন্দর নির্মাণ কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ প্যাসেপিক জিন্স, ম্যাফ ফুট ওয়্যার, ফোর এইচ গ্রুপ, পেনিনসুলা এয়ারপোর্ট গার্ডেন ফাইভস্টার হোটেল, ভারটেক্স অফডক লজিস্টিক সার্ভিসেস লিমিটেড, বে-লিংক কন্টেইনার ডিপো, জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম কারখানার ভবন নির্মাণ এবং পেভিং এর কাজের জন্য ব্যবহার হচ্ছে।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর এবং পি.ডব্লিউডি এর বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজেও এখানকার ব্লক ব্যবহার করা হচ্ছে। আর মিরসরাই থেকে নদী এবং সমুদ্র পথে এটি সমগ্র দেশে পাঠানো যাচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় বাড়িঘর নির্মানের জন্য গ্রীণ বøক ফ্যাক্টরীর কংক্রিট ব্লক ব্যবহার করা হচ্ছে।

ব্লকের গুণগত মান নিয়ে গ্যাসমিন লিমিটেড এর প্রধান প্রকৌশলী আফসার কামাল সিদ্দিকী জানান, গ্রীণ ব্লক ফ্যাক্টরীতে ব্লক নির্মাণে ব্যবহার করা হয় ২.৫ এফএম সিলেট বালু, ১.৫ এফএম লোকাল বালু, ওপিসি সিমেন্ট, হাইগ্রেড এডমিক্সার, কংক্রিট ও নুড়ি পাথর। এছাড়া গুণগত মান ঠিক রাখতে উৎপাদনের আগে পরে ল্যাব টেষ্ট এর মাধ্যমে এর পিএসআই নির্ণয় করা হয়।

গ্যাসমিন লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুব উর রহমান রুহেল বলেন, ‘হলো ব্লক দিয়ে বাড়ি বা বহুতল ভবন নির্মাণ করলে ২৫ ভাগ খরচ কম হয়। এ ছাড়া ভবনের লোড বিয়ারিং ক্যাপাসিটি সমানভাবে কমবে। পাশাপাশি মানের দিক থেকেও সাধারণ ইটের তুলনায় টেকশই-মজবুত হবে। পরিবেশের কোনরকম ক্ষতিসাধন না করেই এটি উৎপাদন করা যায়।’

এদিকে গ্রীণ ব্লক লিমিটেড এর দুটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কোন রকম হাতের ছোঁয়া ছাড়াই সম্পূর্ণ সয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তৈরি করা হচ্ছে কংক্রিট ব্লক। সয়ংক্রিয় পদ্ধতির হওয়ায় ফ্যাক্টরীর আয়তন অনুযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা নগণ্য।

হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) এর প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার মো. আকতার হোসেন সরকার বলেন, ‘আমাদের দেশে তৈরি সাড়ে চারটি সাধারণ ইটের পরিমাণ সাইজে তৈরি হয় একটি হলো ব্লক। এটাতে একদিকে সিমেন্টের ব্যবহার যেমন কম হয় অন্যদিকে ক্রেতারা সাশ্রয়ী দামে এটি পান। এছাড়া ওজনের দিক দিয়ে সাধারণ ইটের চেয়ে কম হওয়ায় ভূকম্পনরোধেও এটি সহায়ক। মানের দিক থেকে অবশ্যই সাধারণ ইট থেকে ভালো। এটি ব্যবহারে সকল স্তরের মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করা প্রয়োজন।’