খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : দেশে চাল আটাসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে৷ এরইমধ্যে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আটার দাম ২৫০ টাকা বেড়ে গেছে৷ চিকন চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে৷ তবে মোটা চালের দাম আগের মতই আছে৷ শাক-সবজিসহ অন্যান্য তরিতরকারির দাম কেজিপ্রতি কিছুটা বেড়েছে।

দেশে আটার চাহিদার জন্য গম আমদানির প্রায় অর্ধেকই হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে৷ জানা গেছে, মোট চাহিদার অর্ধেক আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে৷

এই মুহূর্তে দেশে যে পরিমাণ গম মজুত আছে তা দিয়ে আপাতত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা গেলেও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করলে দেশের বাজারে তা প্রভাব ফেলতে পারে৷

জানা গেছে, দেশে এখন ২০ লাখ টন গম মজুত আছে৷ ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, আপাতত এটা নিয়ে সংকট হওয়ার কথা নয়৷ এটা নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানা গেছে৷ তবে শুধু গম নয়, আমদানি নির্ভর সব পণ্যের জন্যই বিকল্প উৎসের সন্ধান করা হচ্ছে৷

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, যুদ্ধের প্রভাবে সব কিছুর দামই বেড়ে গেছে৷ আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে৷ তবে এখানে যেটা হয়েছে তা হলো খুচরা, পাইকারি এবং মিল সব পর্যায়েই দাম ‘ম্যানুপুলেট’ করা হয়েছে৷

এখন চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে৷ চিকন চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে৷ দাম বেড়েছে আটা, মসুর ডাল, ছোলা, মুরগি, ডিম এবং শাক সবজির৷ তবে পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে৷

এদিকে যুদ্ধের অজুহাতে দেশের ব্যবসায়ী ছাড়াও সুযোগসন্ধানী দলের তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে৷

পুলিশ শনিবার লালমাটিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক এক কর্মকর্তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫১২ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে৷

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, লায়েকুজ্জামান নামের ওই সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রির আশায় ৬ মার্চ ৫১২ লিটার সয়াবিন তেল কিনে তার বাসায় স্টক করে রেখেছিলেন৷ ওই তেল উদ্ধার এবং তাকে আটক করা হয়েছে৷

উপকমিশনার আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এমন আরো অনেক ব্যবসায়ী এবং সুযোগসন্ধানী দল সয়াবিন তেলসহ নানা ভোগ্যপণ্য স্টক করেছেন৷ তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি৷

এর আগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মুরগির খামার, বাথরুমসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে স্টক করা সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়েছে৷

সরকার ভোজ্য তেলসহ আরো অনেক ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে৷ এরমধ্যে আছে এক কোটি পরিবারকে ন্যায্যমূল্যে টিসিবি সয়াবিন তেলসহ চারটি পণ্য দেয়ার সিদ্ধান্ত৷ ঢাকায় এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷ ঢাকার বাইরে শুরু হবে ১৫ মার্চ থেকে৷

এছাড়া সয়াবিন, চিনি ও ছোলার উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে৷ সয়াবিনের ওপর থেকে শতকরা ২০ ভাগ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ কিন্তু বাজারে এর প্রভাব খুব বেশি পড়েনি৷

ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমে এসেছে৷ তবে তা এখানা সহনীয় পর্যায়ে আসেনি৷

বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ থেকে ৫ টাকা কমেছে৷ কিন্তু সেটা প্রকৃত দামের চেয়ে অনেক বেশি৷ খোলা সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারে সরকার নির্ধারিত দাম ১৪৩ টাকা৷ কিন্তু সেটা এখনো ১৬৫ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না৷ বোতলজাত সয়াবিনের দামও কমেছে৷ কিন্তু ভ্যাট প্রত্যাহারের পর বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকা থেকে কমে ১৬০ টাকা হওয়ার কথা৷ কিন্তু এখনো তা ১৭০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে৷

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন বলেছেন, ভ্যাট প্রত্যাহারের পর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩০ টাকা কমা উচিত ছিলো৷ কিন্তু কমেছে চার-পাঁচ টাকা৷ ব্যবসায়ীরা এখন বলছে আগে আমরা বেশি দামে কিনেছি তাই কমাতে পারছি না৷ তো কম দামে কেনা তেলের দাম তারা কেন বাড়ালো? এগুলো কে দেখবে?

তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মনে করে, ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রভাব বাজারে পড়তে আরো সময় লাগবে৷ কারণ এখনো এসআরও জারি হয়নি৷ আর যে অসাধু সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে৷ সিন্ডিকেট ভেঙে গেলে বাজার আরো সহনীয় হবে৷

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল রোববার বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ফায়দা নিতে না পারে সেজন্য দু-একদিনের মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা কথাবার্তা বলেই দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমরা কোথাও মজুতদারি করতে দেবো না। কোনো সুযোগ নিতে দেবো না।

রোববার সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ও বাজার পর্যালোচনায় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

টিপু মুনশি বলেন, ‘আজকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে যেখানে অবৈধ মজুত করার প্রচেষ্টা করা হবে, সেখানেই আমরা হস্তক্ষেপ করবো। এমন না যে আজকে দাম বাড়ার কারণে তারা দাম বাড়িয়েছে, আসলে তারা আগের হিসাব ধরে বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা সেটা বন্ধ করবো।’