এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : আজ থেকে নয় বছর পূর্বে জমানো সামান্য টাকা আর ধার-দেনা করে প্রবাসে পাড়ি জমান হেলাল উদ্দিন। ভালো চাকুরী পেয়ে সুখে চলছিল তাঁর সংসার। কিন্তু প্রবাসে ৮ মাস পার হতেই তার জীবনের কালো আধার। এক সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাত পান বাম পায়ে। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে দেশে চলে আসতে হয়। দেশে এসে বিভিন্ন ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ না হওয়ায় ওই পায়ের নিচের একটি অংশ (তালু) কেটে ফেলার কঠিন সিদ্ধান্ত দেন চিকিৎসারত ডাক্তার। ব্যয়বহুল চিকিৎসা খরছ আর বিদেশ যাওয়ার ধার দেনার টাকা শোধ করতে হিমশিম খেয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে কিছুটা শোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অন্যদিকে পায়ের অপারেশন শেষে চলছিল চিকিৎসা। এর মাঝে সংসারে নুন আনতে ফুরায় অবস্থা।
পা কিছুটা সুস্থ হলেও পুরোনো পেশা কৃষি কাজে ফিরতে পারবেন না পঙ্গুত্ব বরণ করা হেলাল উদ্দিন। টানপোড়নে চলছিলো তার সংসার। স্ত্রীসহ রয়েছে দুই পুত্র সন্তান। একজন পঞ্চম ও অন্যজন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। দুটি ছেলের ভরণপোষণ ও পড়ালেখার খরচসহ সংসার চলছিলো মাত্র ৪ হাজার টাকার একটা গ্রাম্য চায়ের দোকানে চাকরীতে।
উচ্চবিলাসী স্বপ্ন না থাকলেও ছিলো টানপোড়নের সংসারের চাকা সচল রাখার চিন্তা। মাত্র ৪ হাজার টাকায় চলছিলো পঙ্গু হওয়া হেলাল উদ্দিন। আর এরই মাঝে জ্বলে উঠে তার জীবনে বিষাদের আগুন। গত রোববার মিরসরাই উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের মধ্য মায়ানী গ্রামের ছদু হাজির বাড়িতে আগুনে পুড়ে যাওয়া ৯ পরিবারের একজন হেলাল উদ্দিন। আগুনে পুড়ে সর্বস্বান্ত হন তিনিও।
সরেজমিন তার বাড়িতে গেলে এই প্রতিবেদককে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দুটি খাট, একটি আলমিরা, একটি সো-কেস, স্ত্রীর গহনা, মোবাইল সেট, ও নগদ ২০ হাজার টাকা পুড়ে যায়। পরনের একটি শার্ট আর একটি লুঙ্গি ছাড়া এখন কিছুই নেই তার। দুটি ছেলের শীতের কাপড়সহ সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘর সংস্কার আর একটি গরু বাছুর নেয়ার জন্য নিজে না খেয়ে ঔষধ চিকিৎসা না করে জমিয়েছিলেন এই ২০ হাজার টাকা। কিন্তু একমাত্র সম্বলটাও পুড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছেন হেলাল উদ্দিন।