ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুর সংবাদদাতা : মুসলিম উম্মাহ’র দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি এবং কল্যাণ কামনার মধ্য দিয়ে আজ রোববার শেষ হয়েছে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এবার মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশের মাওলানা হাফেজ জুবায়ের। আরবি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় মোনাজাত করা হয়।
ভোর থেকে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখ লাখ মুসল্লীর প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। ২৩ মিনিটের মোনাজাতে বিশাল এ জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।
আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজতে লাখ লাখ মুসল্লি আকুতি জানান। এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমায় শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ছুটে আসতে থাকেন শনিবার থেকেই। বাস, ট্রাক, মিনিবাস, কারসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন মুসল্লিরা। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন ভিড় এড়াতে শীত, কুয়াশা ও নানা ঝক্কি ঝামেলা উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখী হন।
রোববার সকালেও চারদিক থেকে অনেক মুসল্লি পায়ে হেঁটেই টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা স্থলে পৌঁছেন। সকাল ৮টার আগেই ইজতেমা মাঠ ছাড়িযে মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। আজ ভোর থেকেই ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য পুরানো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন।
যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে-বসে হাত তুলে মোনাজাতে শরিক হন। অনেকে উত্তরা ও বিমানবন্দর গোল চত্বর এলাকা থেকে মোনাজাতে অংশ নেন।
মোবাইল ফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরো লাখ লাখ মানুষ মোনাজাতে শরিক হতে পারেন।
এ ছাড়া ইজতেমা ময়দানের পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি, কলকারখানা, অফিস, দোকানের ছাঁদে, যানবাহনের ছাঁদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন।
আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববারে ইজতেমার আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোন কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি নারীরাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছান।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে গাজীপুর ও টঙ্গীর সব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। ফলে এবার এসব কারখানার শ্রমিকরাও ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে বিপুল সংখ্যক নারীও অংশ নিয়েছেন। ইজতেমায় নারীদের অংশ নেওয়ার বিধান নেই। তবে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার নারী আগের দিন রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের আশপাশ, বিভিন্ন মিল-কারখানা, বাসা-বাড়িতে অবস্থান নেন।
আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আশা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেন। এতে টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী- কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাষ্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়ক গুলোতে দীর্ঘ জনজট ও যানজট দেখা দেয়।
আগামী শুক্রবার ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা।