পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ইন্টারনেট
খোলাবার্তা২৪ ডেস্ক : বিজেপিকে ‘চিটিংবাজ পার্টি’ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মিথ্যাবাদী বললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘রাজ্য সম্পর্কে মিথ্যাচার করে গিয়েছেন অমিত শাহ। বিজেপির তরফে তাঁকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, কোনও খোঁজখবর না নিয়েই তা পরিবেশন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।’ নবান্ন থেকে এবার সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অমিত শাহের রাজ্য সফর শেষের পর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। সোমবার তথ্য ধরে ধরে বোলপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বাংলার ‘অনুন্নয়নের’ খতিয়ানকে খণ্ডন করলেন মমতা। সঙ্গে জুড়ল পাল্টা অভিযোগ, মিথ্যাবাদী! মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি কটাক্ষ, ‘রাজনৈতিক দলের জন্য বলা, আর মিথ্যা তথ্য দেওয়া কোনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষেই মানায় না। আমি অমিতজিকে বলব, আপনি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! আপনার পক্ষে এসব শোভা পায় না!’ শুধু তাই নয়, বোলপুরের মাটিতেই গেরুয়া শিবিরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার পন্থা নিয়েছেন তিনি। আগামী ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে বোলপুর শহরে হবে মমতার পদযাত্রা। যে রুটে রোড শো করেছিলেন অমিত শাহ, ঠিক সেই রাস্তায়। হেঁটেই প্রতিবাদ জানাবেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান এবং তাঁর রচিত জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে গেরুয়া শিবিরের তরফে উস্কে দেওয়া ‘বিতর্কে’র। রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপিকে, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবমাননা বরদাস্ত করব না, মানব না। প্রয়োজনে রক্ত দেওয়ার জন্য তৈরি থাকব।’
তৃণমূলের তরফে অমিত শাহের মিথ্যাচার প্রকাশ্যে আনার কাজটা এগিয়ে রাখা হয়েছিল রবিবারই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে রাজ্য সফর চলাকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগের রাস্তায় হাঁটেননি মমতা। এদিন সেই বাধ্যবাধকতা ছিল না। তাই সমস্ত মিথ্যাচারের পর্দা ফাঁস করেই ক্ষান্ত হননি মমতা। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্যও যে তাঁর কাছে রয়েছে, তাও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান বলেন, যার সম্পর্কে আপনার (অমিত শাহ) কোনও ধারণাই নেই, তা নিয়ে প্রথমে ক্রস চেক করুন। তারপর বলুন! আপনি যা যা মিথ্যা বলেছেন, তার প্রত্যেকটার তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি কাল (মঙ্গলবার) সেগুলি নিয়ে বলব।’
কী কী সেই মিথ্যাচার? মমতার কথায়, ‘উনি বলেছেন, আমরা নাকি শিল্পে জিরো! অথচ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প (এমএসএমই) ক্ষেত্রে আমরা দেশের সেরা, নাম্বার ওয়ান। উনি আরও বলেছেন, আমরা নাকি গ্রামীণ এলাকায় কোনও রাস্তাই তৈরি করতে পারিনি। অথচ আমরাই গ্রামীণ রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে নাম্বার ওয়ান!’ কিসের ভিত্তিতে একথা বলছেন, তাও অমিত শাহকে স্মরণ করিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘এটা আমাদের নিজেদের তৈরি তথ্য নয়। মনে রাখবেন, এটা ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য। তা খণ্ডন করাটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে কোনওভাবেই মানায় না।’
এদিন বিকেলে পার্ক স্ট্রিটে বড়দিন উৎসবের সূচনা করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেও নাম না করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যার বেসাতির অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘দিল্লি থেকে আসছেন আর মিথ্যার বেসাতি করছেন। গোটা দেশে ঘৃণার রাজনীতি করছেন। দেশের সার্বভৌমত্ব আর ধর্মনিরপেক্ষতার উপর আঘাত হানা হচ্ছে। আসলে বাংলাকে হিংসা করছে ওরা।’ পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধেও সরব হন তিনি।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং রাজ্য থেকে তিন আইপিএস অফিসারকে ‘তুলে নেওয়ার’ কেন্দ্রীয় তোড়জোড়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। সিএএ প্রসঙ্গে বিজেপিকে বিঁধেছেন ‘চিটিংবাজ পার্টি’ বলে। আইপিএস ইস্যুতে রাজ্যের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেছেন সবার সামনেই। তা হলো- যে বিধির ভিত্তিতে ওরা (কেন্দ্র) এটা করতে চাইছে, সেটা জরুরি অবস্থার সময় করা যায়। আর এখানেই মমতার প্রশ্ন, বাংলায় কি জরুরি অবস্থা চালু করে দিয়েছে? না হলে এসব করছে কেন! – বর্তমান